মাংসের দামে ক্রেতাদের স্বস্তি

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছে মাংস ব্যবসায়ী ও খামারিদের সংগঠন। তবে ঢাকার অনেক বাজার ও দোকানে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে এর চেয়েও কম দামে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে।

অতিরিক্ত দাম হওয়ার কারণে যারা অনেক দিন গরুর মাংস কেনেননি, তাদের অনেকেই এখন মাংসের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। ফলে এখন বিক্রি বেড়েছে মাংসের। বেশ কিছু সময় পরে মাংসের দাম কমায় স্বস্তি পেয়েছেন ক্রেতারা।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চে গরুর মাংসের দাম ৮০০ টাকায় উঠেছিল। বিক্রেতারা বলছেন, কম দামে গরু পাওয়ার কারণে তারা এখন আগের চেয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করতে পারছেন। লাভ কম হলেও এখন বিক্রি বেড়েছে।

তবে ভিন্ন চিত্রও রয়েছে কিছু বাজারে। সেসব বাজারে এখনো ৭০০ টাকায় মাংস বিক্রি হচ্ছে। বাড্ডা, সেগুনবাগিচা ও মিরপুরের কিছু দোকানে এমনটা দেখা গেছে। আবার সুপারশপগুলোতে শুক্রবার বাদে অন্যান্য সাধারণ দিনে মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৪০ টাকা পর্যন্ত।

তবে মোটাদাগে এখন ঢাকায় মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা বলা যায়। এতে খামারি, গরু ব্যবসায়ী, কসাই ও ক্রেতা- সবপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে অনেক দিন ধরেই গরুর মাংসের দাম বেশি থাকায় বেচাকেনা অনেক পড়ে গিয়েছিল। তবে মাংসের দাম কমে আসায় এখন আগের তুলনায় বেচাবিক্রি অনেকটাই বেড়েছে। দাম কমায় ক্রেতারাও খুশি।

মালিবাগে খোরশেদ গোস্ত বিতানের খোরশেদ আলম বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন ২-৩টা গরু জবাই হতো, এখন সেখানে ৮-১০ টা হচ্ছে। আবার বৃহস্পতিবার বা বিশেষ দিনে সে সংখ্যা আরও বাড়ছে। আগের তুলনায় কেজিপ্রতি লাভের পরিমাণ কম হলেও বেশি বিক্রি হওয়ার কারণে মুনাফা বেশি হচ্ছে।

ওই দোকানে মাংস কিনতে এসেছেন বাড্ডা এলাকা থেকে মুমিনুল হক। তিনি বলেন, মধ্যবাড্ডা বাজারে মাংসের কেজি এখনো ৭০০ টাকা। যে কারণে এখানে মাংস কিনতে এসেছি।

এদিকে, মাংসের দাম কমানোর প্রসঙ্গে এখন খুব বেশি আলোচনায় এসেছে শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল। তার গোস্ত বিতানে শুরু থেকে কম দামে মাংস বিক্রি হয়। খলিল গোস্ত বিতানে এখন ৫৯০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি হচ্ছে। এখন শুধু নয়, যখন মাংসের দাম ৮০০ টাকা কেজি ছিল, তখন তিনি হুট করে ৬০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি শুরু করেন। তখন থেকে সর্বক্ষণ ক্রেতার ভিড় লেগে থাকে তার দোকানে। বাধ্য হয়ে আশপাশে আরও কিছু দোকানে কম দামে মাংস বিক্রি শুরু হয়।

খলিলুর রহমান বলেন, সে সময় দাম ৮০০ টাকা হওয়ার বিক্রি একদম কমে গিয়েছিল। লোকসান না হলেও কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। তখন এক সপ্তাহের জন্য ৬০০ টাকার কমে মাংস বিক্রি করে একই পরিমাণ লাভ করতে পারেন কি না, তা দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী তিন দিনের জন্য ২০টি গরু কিনেছিলেন। তবে দাম ৫৯৫ টাকা করার প্রথম দিনেই ১৯টি গরুর মাংস বিক্রি হয়ে যায়।

এরপর থেকে ব্যানার পোস্টার লাগিয়ে ‘দাম কম, বেশি বিক্রি’ পন্থা শুরু করি। দাম কমানোর পর দিনে ৪৫-৫০টা গরুর মাংসও বিক্রি হয়েছে। এরপর অন্যরা দাম কমানোর পর দিনে ২০-২২টা বিক্রি হচ্ছে। যা আগের চেয়ে চারগুণের বেশি।

যদিও কম দামের মাংসের মান নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। আবার যেহেতু সব বাজারে গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে না, তাই অনেকে খানিকটা বিভ্রান্তও হচ্ছেন।

এদিকে, আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, মূলত বাজারে গরুর দাম কমে যাওয়ার কারণে কম দামে মাংস বিক্রি সম্ভব হচ্ছে। গত দেড় মাস ধরে গরুর বাজার খারাপ যাচ্ছে। আগের তুলনায় প্রতিটি গরু ৫ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত দাম কমেছে।

তারা বলছে, শীতে খামারিদের কেনা গোখাদ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এখন গোখাদ্যের দাম অনেক বেশি। যে কারণে টিকতে না পেরে অনেক খামারি গরু বিক্রি করছে। আবার চাষিরাও এখন ফসল লাগানোর টাকা জোগাতে পালিত গরু-ছাগল বিক্রি করছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হরতাল অবরোধের কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান কমেছে। যে কারণে চাহিদার থেকে যোগান বেশি।